পোশাকের ক্রেতাদের ‘অন্যায্য’ দাবি, অস্ট্রেলিয়ায় সমালোচনার ঝড়


অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অন্যায্য দেনদরবারের সংবাদ। ‘মূল্যহ্রাসের চাপ, সরবরাহ ধরে রাখতে কাজ করছে এই করোনাভাইরাসের দিনেও’ শিরোনামে এক অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত গণমাধ্যম অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (এবিসি)। খবর প্রকাশের পর দেশটিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।এবিসির খবরে বলা হয়, করোনাভাইরাসের এই মহামারির দিনেও ক্রয়াদেশ ধরে রাখতে বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের কাজ করতে হচ্ছে। এরপরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ক্রয়াদেশ অনুযায়ী উৎপাদিত পোশাক নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল্যছাড় দাবি করছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এমনকি পোশাকের দাম পরিশোধে আট মাস পর্যন্ত সময় দাবি করছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। আবার পুরো ক্রয়াদেশ বাতিল করতে চাইছে—সেই উদাহরণও রয়েছে। ফলে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য সম্ভাব্য বিপর্যয়মূলক পরিণতি অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি মোসাইক ব্র্যান্ড ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত বা বিলম্বে অর্থ পরিশোধ করতে চায়। ব্র্যান্ডটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিভারস, কাইটস, রকম্যানস, অটোগ্রাফ, ননি বি, মিলারস, ডব্লিউ লেনি অ্যান্ড বেমি। কিছু ক্রয়াদেশের অর্থ পরিশোধে মোসাইক আট মাস পর্যন্ত সময় চেয়েছে।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক অস্ট্রেলিয়ার কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের আচরণ বিস্ময়কর বলেউল্লেখ করেছেন। তিনি এবিসিকে বলেছেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। পোশাকের দাম পরিশোধে ছয় মাসের বেশি সময় চাওয়া অগ্রহণযোগ্য। ছয় মাসের মধ্যে ক্রেতারা কিছু অর্থ পরিশোধ না করতে পারলে আমরা টিকে থাকতে পারব না।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার আরেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কেমার্ট পোশাক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইতিমধ্যে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ মূল্যছাড় দেওয়ার অনুরোধ করেছে। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যেসব ক্রয়াদেশ স্থগিত করা হয়েছিল, সেগুলো যদি পরিবর্তিত সময়সীমার মধ্যে সরবরাহ করা না হয়, তাহলে সেগুলোর কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না কেমার্ট।
বাংলাদেশের একজন পোশাকশিল্প মালিক এবিসিকে বলে, কেমার্টের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সব পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে কটন অন নামে অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছিল। তবে সম্প্রতি তাদের সিদ্ধান্ত কিছুটা বদল করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ইতিমধ্যে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়েছে এবং উৎপাদন পর্যায়ে থাকা সব পণ্য আমরা নেব। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।অস্ট্রেলিয়ার অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংগঠন অক্সফাম পোশাকশ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি করোনার এই মহামারির সময়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকের বেতন-ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
করোনাভাইরাস চীনের বাইরে ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে যাওয়ার পর গত মার্চে একের পর এক পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হওয়ার তথ্য আসতে থাকে। বিজিএমইএ জানায়, দেশের ১ হাজার ১৫০ কারখানার ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। তাতে প্রায় ২২ লাখ পোশাকশ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
Collected :প্রথম আলো

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.