বাতিল অর্ডারের পোশাক অর্ধেক দামে বেচে বাংলােদশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন স্কটল্যান্ডের এক ব্যবসায়ী
করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের মধ্যে অর্ডার বাতিল করার কারণে বাংলাদেশে যে হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক দুদর্শার মধ্যে পড়েছেন তাদের সাহায্য করছেন যুক্তরাজ্যে এডিনবারার এক ব্যবসায়ী।
ক্যালি রাসেল বলছেন যুক্তরাজ্যের খুচরা পোশাক বিক্রেতারা তাদের চুক্তি বাতিল করে দেবার ফলে বাংলাদেশে পোশাক কারখানাগুলোতে বিক্রি না হওয়া পোশাকের পাহাড় জমে উঠেছে।
বত্রিশ বছর বয়স্ক ব্যবসায়ী ক্যালি রাসেল এখন ঠিক করেছেন এসব পোশাক তিনি বাক্সে ভরে যুক্তরাজ্যে অর্ধেক দামে বিক্রি করবেন। বাক্সগুলো তৈরি করা হবে খদ্দেরদের পছন্দ বিবেচনায় নিয়ে।
এই বিক্রির অর্থ পাঠানো হবে বাংলাদেশে যেসব পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন তাদের সাহায্য করতে।
অনলাইনে পোশাক বিক্রির প্ল্যাটফর্ম ম্যলজি-র প্রধান নির্বাহী মি. ক্যালি রাসেল তার এই নতুন উদ্যোগের নাম দিয়েছে 'লস্ট স্টক'।
যারা পোশাক কিনতে চান তাদের একটা ফর্ম পূরণ করে জানাতে হবে তাদের সাইজ (মাপ) এবং কীধরনের পোশাক তার পছন্দ। এরপর এক বাক্স পোশাক যার আসল দাম ৭০ পাউন্ড তা তিনি কিনতে পারবেন অর্ধেক দামে অর্থাৎ ৩৫ পাউন্ডে।
এরপর বাংলাদেশে এইসব পোশাক বাক্সে প্যাক করা হবে এবং পাঠানো হবে যুক্তরাজ্যে। খদ্দেররা পোশাক আলাদা আলাদা করে পছন্দ করতে পারবেন না। কিন্তু প্রত্যেক খদ্দেরের পছন্দ বিবেচনায় নিয়ে বাক্স তৈরি করা হবে।
তিনি জানান: ''বিবিসির নিউজ অনলাইনে একটি খবর পড়েছিলাম, যেখানে পোশাক কারখানার একজন কর্মী বলেছিলেন, 'করোনা ভাইরাস থেকে আমার শ্রমিকরা মারা না গেলেও, না খেয়ে তারা মারা যাবে,' তখন আমার মনে হয়েছিল, আমার তো এই ব্যবসায় কিছু যোগাযোগ আছে। দেখি আমি যদি ওদের সাহায্যে কিছু করতে পারি।''
''আমার বিভিন্ন পরিচয়ের সূত্র ধরে আমি বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর সাথে যোগাযোগ করার পর এখন দুই কোটি পাউন্ড মূল্যের পোশাক আমাদের হাতে এসেছে।
এ মাসের শেষের মধ্যে আমরা পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিককে সাহায্য করতে চাই, এবং বছরের শেষ নাগাদ সেটা বাড়িয়ে এক লাখ শ্রমিককে সহায়তা করার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি," বলেন মি. রাসেল।
মি. রাসেল বলছেন এইসব অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়া পোশাক কিছু অর্থ তো আনবে।
তিনি বলেন: ''এগুলো ২০২০-র বসন্তকালীন ও গ্রীষ্মকালীন অর্ডারের মাল। বিক্রেতারা জানে না কখন তাদের দোকানগুলো আবার খুলবে। তাই তারা তাদের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে।
''এইসব বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বাংলাদেশি পোশাক কারখানার সাথে চুক্তি করেছিল, তখন ওই চুক্তিতে একটি বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল, যার আওতায় অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চুক্তি আইনত বাতিল করার এখতিয়ার এই দোকানগুলোর ছিল।
"আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুক্তিটা এমন যে খুচরা বিক্রেতারা পোশাক কারখানাগুলোকে মাল হাতে পেলে তবেই পাওনা অর্থ দেবে। কাজেই গার্মেন্টস কারখানাগুলো তাদের কাপড়, অন্যান্য সরঞ্জাম ও মজুরি বাবদ যে অর্থ ব্যয় করে তাতে উৎপাদনের খরচের সব ঝুঁকি ও দায় তাদের ওপরই বর্তায়।
"আমরা এখন চাইছি এই অর্ডারের যাতে পুরোপুরি বরবাদ না হয়ে যায়। এতে কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের কিছুটা সাহায্য হবে আর আমাদের খদ্দেররাও লাভবান হবে।''
বাংলাদেশে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করেন।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি পোশাক। মি. রাসেল বলেন ব্রিটেন যদি এখন লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে শুরুও করে, তাহলেও বাংলাদেশের জন্য পোশাক খাতে যেসব অর্ডার লাইনে রয়েছে সেগুলো আবার সামাল দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অন্তত এক বছর সময় লেগে যাবে।
''এই খাতে আমাদের যে যোগাযোগ আছে এবং আমাদের যে সাধ্য আছে তা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে আমরা সাহায্য করতে চাই এবং আমাদের আস্থা আছে যে আমরা কিছু একটা নিশ্চয়ই করতে পারব,'' তিনি বলেন।
মি.রাসেল এবং তার দুই সহযোগী ক্যালাম স্টুয়ার্ট ও জেমি সাদারল্যান্ড বাংলাদেশে সাজিদা ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করছেন।
সাজিদা ফাউন্ডেশনের মুহিমিন চৌধুরী বলছেন: "লস্ট স্টকের সাথে কাজ করতে পেরে আমরা খুশি। কারণ গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর দিক থেকে এই দুর্ভাগ্যজনক ব্যর্থতা কিছুটা হলেও লাঘব করতে লস্ট স্টকের এই উদ্যোগ সাহায্য করবে," জানান তিনি।
বিবিসি
Collected News : BBC
No comments